32.8 C
Dhaka
Monday, June 23, 2025

অটো স্ট্যান্ড দখল নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, নিহত ২

advertisment
- Advertisement -spot_img

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় অটো স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুজন খুন হয়েছেন। শনিবার (২১ জুন) রাতে বন্দর রেললাইন ও শাহী মসজিদ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার।

নিহতরা হলেন—বন্দর উপজেলার হাফেজীবাগ এলাকার প্রয়াত সাদেক আলীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুস (৫৫) এবং শাহী মসজিদ এলাকার প্রয়াত আব্দুল জলিল মুন্সির ছেলে মেহেদী হাসান (৪২)। নিহত কুদ্দুস পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং মেহেদী স্বেচ্ছাসেবক দলের বন্দর থানা শাখার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।

স্থানীয়রা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা এবং ইজিবাইক স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির বহিষ্কৃত সদস্য হান্নান সরকার ও বিএনপির কিছু নামধারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ও শনিবার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

নিহতদের স্বজন, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে বিএনপির নামধারীদের দুটি গ্রুপ তৈরি হয়। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন রনি ও জাফর, অন্য পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন মেহেদী হাসান, বাবু সিকদার, জুয়ারি বাবু ও শ্যামল।

কয়েকদিন আগে চুরির টিন বিক্রি নিয়ে শুরু হয় উত্তেজনা, যা শুক্রবারের সংঘর্ষে রূপ নেয়—আহত হন অন্তত আটজন। এরপর শনিবার বিকেলে উভয় পক্ষ শাহী মসজিদ, বন্দর রেললাইন ও হাফেজীবাগ এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দেয়।

রাতে বন্দর রেললাইন এলাকায় কুদ্দুসকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত কুদ্দুসের ছেলে পারভেজ রনি ও জাফর গ্রুপের সদস্য। পারভেজকে না পেয়ে তার বাবাকে হত্যা করা হয়।

কুদ্দুসের ছোট ভাই দুদু মিয়া বলেন, “ভাই চায়ের দোকানে ছিলেন। সেখান থেকে ডেকে নিয়ে পারভেজের খোঁজ জানতে চায়। ভাই অনেকবার বলেছে, ‘আমারে মারিও না’, কিন্তু কেউ শোনে নাই। পরে আমরা লাশ পাইছি হাসপাতালে।”

এদিকে কুদ্দুস নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা বাড়ে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রনি ও জাফর গ্রুপের সদস্যরা মেহেদী হাসানকে ধরে সিরাজউদ্দৌলা ক্লাবের সামনে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মেহেদীর দুলাভাই মাহফুজুল হক সৌরভ বলেন, “মেহেদী ঘটনার সময় আমিন আবাসিক এলাকায় নিজ বাড়িতে ছিল। পরে রাস্তায় ধরে ক্লাবে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। বুকে, মুখে ও মাথায় আঘাতে শরীর থেতলে গেছে।”

ঘটনার পর বন্দর এলাকা থমথমে হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টহল দেখা গেছে। সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার।

রনি-জাফর গ্রুপের নেতা জাফর বলেন, “আমি বিএনপির একজন কর্মী। বাবু-মেহেদী গ্রুপ মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি করে। আমি প্রতিবাদ করায় হান্নান সরকারের নির্দেশে তারা হত্যার হুমকি দেয়। এরপর পারভেজের বাবাকে হত্যা করেছে।”

পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, “স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এই হত্যাকাণ্ড দুটি ঘটেছে। জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।” তিনি জানান, রাতেই র‌্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে অন্তত তিনজনকে আটক করা হয়েছে এবং দুটি পৃথক হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।

সর্বশেষ সংবাদ
- Advertisement -spot_img
আরও নিউজ