‘১৬ জুলাই নিয়ে নাটক করা হয়েছে।’—এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন। তিনি বলেন, “তারা যদি আগেই ঘোষণা দিতেন, ১৬ জুলাই ‘জুলাই শহীদ দিবস’, তাহলে আপত্তির জায়গাটা কম থাকত। কিন্তু ঘোষণা দিয়ে একজন আইকনিক শহীদের এই ধরনের অপমান আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। যার আত্মত্যাগ যুগে যুগে মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে, তার জন্য তারা একটা দিনও রাখতে পারলেন না।”
মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকালে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মাসব্যাপী কর্মসূচি ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শুরুর আগে এসব কথা বলেন তিনি। শহীদ আবু সাঈদের রংপুরের পীরগঞ্জের বাড়ি থেকেই এ পদযাত্রা শুরু হয়।
আবু হোসেন বলেন, “আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি—অনেক দিবস পালন করা হয়েছে, অনেক মানুষের নামে—যাদের জাতির জন্য এক পয়সারও উপকার ছিল না। তাদের জন্য দিবস হয়েছে। কিন্তু শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যুর দিনটা ‘আবু সাঈদ শহীদ দিবস’ ঘোষণায় সমস্যা কোথায় ছিল? আমরা যুগে যুগে তো দেখেই আসছি, বিভিন্ন বিপ্লবের শহীদদের বিভিন্নভাবে স্মরণ করা হয়।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের দাবি, ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবস ছিল, আছে, এবং আমরা সেটাই চাই। ‘জুলাই শহীদ দিবস’ যেটা আছে, সেটা জুলাইয়ের যে কোনো দিন পালন করা যেত। কিন্তু ১৬ জুলাই যাঁর আত্মত্যাগে এত বড় বিপ্লব সংঘটিত হলো, তাকে এভাবে অবহেলা করা আমরা মেনে নিতে পারি না।”
তিনি আরও বলেন, “১৬ জুলাই আবু সাঈদের শহীদ হওয়ার মধ্য দিয়ে কোটা সংস্কারের আন্দোলন এক গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। মানুষ আর ঘরে বসে থাকেনি, রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জীবনের মায়া ত্যাগ করে সেই রাজপথে নামার অনুপ্রেরণা ছিল আবু সাঈদ। ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবস ঘোষণা করা হয়েছিল, পরে সেটা বদলে শহীদ জুলাই দিবস করা হলো। তারা তো জুলাইয়ের অন্য দিনেও দিবস রাখতে পারতেন। ৩৬৫ দিন থেকে ১৬ জুলাই কি শহীদ আবু সাঈদের জন্য নির্ধারণ করা যেত না? তাকে স্মরণ করলে কি অন্য শহীদদের অপমান হতো? বরং তার আত্মত্যাগই তো অন্যদের অনুপ্রাণিত করেছে।”
আঞ্চলিক বৈষম্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বৈষম্যের বিরুদ্ধে সবাই লড়াই করল। কিন্তু আদৌ রাষ্ট্রে কতটুকু বৈষম্য দূর হলো? বাজেটেও এখনো আঞ্চলিক বৈষম্য রয়ে গেছে। সরকারে উপদেষ্টা পরিষদে শুধু একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নিয়েছে। রংপুর অঞ্চল থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও কোনো উপদেষ্টা নেই। তাহলে কি এখানে কোনো যোগ্য লোক নেই? শুধু দক্ষিণাঞ্চলের লোকই কি যোগ্য?”
আবু হোসেন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “জুলাই বিপ্লবে যারা আন্দোলন করেছেন, তারাই উপদেষ্টা হলেন। কিন্তু শহীদ পরিবারের কোনো প্রতিনিধি নেওয়া হয়নি। শহীদ পরিবার সাড়ে ৮০০-এর বেশি। তাঁদের মধ্যে কি কোনো যোগ্য মানুষ ছিল না? মনে হচ্ছে এখনো বৈষম্য পুরোপুরি দূর হয়নি। আমরা চাই, একটি বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে উঠুক।”
উল্লেখ্য, ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে পুলিশের গুলির সামনে বুক পেতে দিয়ে শহীদ হন ইংরেজি বিভাগের ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তাঁর আত্মত্যাগের পর দেশব্যাপী আন্দোলন বেগবান হয় এবং একসময় তা এক অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়।