টিনের ছোট ঘর। ঘরজুড়ে অভাবের ছাপ স্পষ্ট। সামনের ছোট উঠান ভরে গেছে স্বজন আর প্রতিবেশীতে। কেউ বিলাপ করছেন, কেউ আফসোস করছেন। এরই মাঝে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন ইমন তালুকদারের মা রোকসানা বেগম।
বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষে প্রাণ হারান ১৭ বছরের কিশোর ইমন তালুকদার।
ইমন ছিলেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ভেড়ারবাজার গ্রামের বাসিন্দা আজাদ তালুকদারের ছেলে। বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ছেলে হারানোর শোকে নির্বাক মা। কেউ এসে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, আবার কেউ সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেরাই কেঁদে ফেলছেন।
ইমনের মামাতো ভাই রানা ভূঁইয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার ভাইডারে প্রাণে মাইরে ফ্যালতে হইল। ও তো প্রাণভিক্ষা চাইছিল। তারপরেও কেন মারলো? কীভাবে মারলো, আমরা ভিডিওতে দেখছি। গুলি করে ফেলে, পরে পাড়ায় ধরে মাইরা ফেললো। এইটা কেমনে সহ্য করুম?”
প্রতিবেশী রাজু তালুকদার বলেন, “তারা দুই বোন, তিন ভাই। বড় ভাই অসুস্থ। এক বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট ভাই-বোন এখনো পড়ে। ওদের পড়ার খরচ দিত ইমন। ওর বাবা অসুস্থ, মাঝেমধ্যে ভ্যান চালান। ছেলের মৃত্যুর খবরে তিনি একদম পাগল হয়ে গেছেন। জানাজায়ও ছিলেন না। কোথায় যেন চলে গেছেন, কেউ জানে না।”
একপর্যায়ে নিথর বসে থাকা রোকসানা বেগম হঠাৎ বলে ওঠেন, “এখন আমার সংসার বাঁচাবার মতো আর কেউ নাই। ছাওয়াল মরছে শুইনা ওর বাপ পাগল হইয়া চইলা গেছে। আমার বাপে সংসারটা টানতো। এখন আমার চার-পাঁচটা ছেলেমেয়ে নিয়া বাঁচার কোনো পথ নাই। আমার ছেলেটারে যেভাবে গুলি কইরা পাড়ায় মাইরা ফেললো, আমি এর বিচার চাই।”
পরিবার জানায়, নিহত ইমন গোপালগঞ্জ শহরের মুন্সি ক্রোকারিজ দোকানে কাজ করতেন। সংঘর্ষের দিন সকালেও তিনি দোকানে যান। দোকানের মালিক দেড়শ টাকা দিয়ে বেলা ১১টার দিকে তাকে ছুটি দেন। বাড়ি না গিয়ে ইমন চলে যান সংঘর্ষস্থলে। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্থানীয়রা তাকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। আইনি প্রক্রিয়া শেষে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটায় গোপালগঞ্জ গেটপাড়ার পৌর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।