ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘তুফান’: একটি ব্যয়বহুল ক্যালিগ্রাফির গল্প
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সম্প্রতি আঁকা হয়েছে ‘তুফান’ নামের একটি ক্যালিগ্রাফি, যা জেলার সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল শিল্পকর্ম হিসেবে পরিচিত। গত ৫ আগস্টের পর থেকে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আইডি থেকে এর ছবি পোস্ট করা হচ্ছে। ক্যালিগ্রাফিটির শিল্পীদ্বয় প্রশংসার ঝড়ে ভাসছেন।
শিল্পীদের পরিচয়
‘তুফান’ ক্যালিগ্রাফিটি এঁকেছেন মো. ওমর ফারুক ও উসাইদ মুহাম্মদ, দুই মাদরাসা শিক্ষার্থী। মো. ওমর ফারুক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসায় দাওরায়ে হাদিসের ছাত্র, এবং উসাইদ মুহাম্মদ ঢাকার লালবাগের একটি মাদরাসা থেকে তাকমিল ফিল হাদিস শেষ করে এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন।
ক্যালিগ্রাফির প্রেক্ষাপট
মো. ওমর ফারুক বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে দেশ নতুনভাবে স্বাধীন হয়। সেই সময় বিভিন্ন দেয়ালে চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে প্রতিবাদ প্রকাশ করা হচ্ছিল। তাঁদের প্রথম সাফল্য আসে ‘স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ ক্যালিগ্রাফি দিয়ে, যা স্থানীয়ভাবে প্রশংসিত হয়। এরপর তারা গত ১০ অক্টোবর আঁকেন ‘তুফান’, যার ব্যয় প্রায় ৮০ হাজার টাকা।
নির্মাণের প্রক্রিয়া
এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুরাতন পাওয়ার হাউজ ভবনে আঁকা হয়েছে, যা যুদ্ধকালীন সময়ে বিধ্বস্ত হয়েছিল। এই ভবনটি দেখে ফিলিস্তিনের পরিস্থিতির কথা মাথায় আসে। তারা বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে এ চিত্র অঙ্কনের পরিকল্পনা করে। কাজ শুরু হতে প্রথমে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তবে অক্লান্ত পরিশ্রমের পর সাত দিনে কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়।
বার্তা ও সাড়া
মো. ওমর ফারুক জানান, ক্যালিগ্রাফিতে আল আকসা মসজিদ এবং ইসরায়েলি হামলার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ রকি বলেন, এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্মে সহযোগিতা করতে পেরে তিনি গর্বিত।
দর্শকদের প্রতিক্রিয়া
সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী হোসেন রাশেদ সরকার বলেন, আল আকসা মসজিদের চিত্রটি অসাধারণ। এই ক্যালিগ্রাফি একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবদুন নুর মন্তব্য করেন, এই শিল্পকর্ম একটি নতুন বিজয়ের সূচনা করবে।
মুসলিমা আক্তার নামে একজন শিক্ষক বলেন, ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে চিত্রশিল্পী তাদের মনের ভাব প্রকাশ করেছেন। তিনি আশা করেন, আল আকসা একদিন বিজয়ের আলোতে আলোকিত হবে।
‘তুফান’ ক্যালিগ্রাফিটি শুধু একটি শিল্পকর্ম নয়, এটি একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করছে, যা ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর হৃদয়ে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।