27.2 C
Dhaka
Tuesday, June 17, 2025

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ আদালতে বিএনপির ১০ যুক্তি

advertisment
- Advertisement -spot_img

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের সম্পর্কিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদনকারী ১০টি যুক্তি উপস্থাপন করেছে।

৮০৭ পৃষ্ঠার এই রিভিউ আবেদন রবিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জমা দেওয়া হবে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) এ তথ্য জানিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান অডিটোরিয়ামে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সংবাদমাধ্যমের কাছে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন।

এই সময় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সিনিয়র সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মোঃ রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং অন্যান্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

জয়নুল আবেদীন বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের জন্য ৪১ পৃষ্ঠার একটি রিভিউ আবেদন করেছেন, যাতে ১০টি যুক্তি উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— আদালতে প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত আদেশকে সংবিধান সংশোধনের পর পূর্ণাঙ্গ রায় থেকে বাদ দেওয়া এবং তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের অবসরের ১৮ মাস পর রায় প্রকাশ করা একটি বিচার বিভাগীয় প্রতারণা।

যুক্তিতে বলা হয়, গণতন্ত্র এবং সুষ্ঠু নির্বাচন একে অপরের পরিপূরক। সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভ ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এছাড়া উল্লেখ করা হয়, সংবিধান একটি জীবন্ত রাজনৈতিক দলিল এবং এর কার্যকারিতা বজায় রাখতে হলে এটি সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্ব হলো সংবিধানকে প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যাখ্যা করা। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য রায়টি পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন।

এডভোকেট জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং সেই কারণে ত্রয়োদশ সংশোধনী মৌলিক মর্যাদা পেয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট এই মৌলিক স্তম্ভকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারে না।

২০১১ সালের ১০ মে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে। এখন সেই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।

জয়নুল আবেদীন জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা গণতন্ত্রের পতনে ও একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছে।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে, এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়, যা জনগণের মুক্তি ও দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনে সহায়ক হয়।

জয়নুল আবেদীন আরও উল্লেখ করেন, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। তবে পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় ঘোষণা করার আগেই সংশোধন করে আওয়ামী সরকার।

এছাড়া, আদালতের ঘোষিত রায় এবং প্রকাশিত রায়ের মধ্যে বৈপরীতা রয়েছে, যা বিচার বিভাগীয় প্রতারণা বলে উল্লেখ করেন জয়নুল আবেদীন।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, দেশের ৯৫ শতাংশ জনগণ মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নির্বাচনের সুষ্ঠুতা এবং নিরপত্তা নিশ্চিত করবে। বিএনপি জনগণের এই প্রত্যাশা পূরণে উদ্যোগ নিচ্ছে।

সর্বশেষ সংবাদ
- Advertisement -spot_img
আরও নিউজ