আগামী বাংলাদেশের গঠন ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার ভিত্তিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক সম্মেলন ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন (বিওবিসি) ২০২৪’-এর তৃতীয় আসরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এই আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
ড. ইউনূস বলেন, “আমাদের তরুণ প্রজন্ম একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের ডাক দিয়েছে। আগামী বাংলাদেশ হবে এমন একটি দেশ, যেখানে মানবাধিকার, ন্যায়বিচার এবং বাকস্বাধীনতার মূল্য থাকবে সবার ওপরে। তবে এটি অর্জনে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে।” তিনি সরকারের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
ড. ইউনূস বলেন, “মানব সভ্যতা আজ এক গভীর সংকটে। পরিবেশ ধ্বংস এবং মুনাফার অন্ধ দৌড় আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে। তাই ‘থ্রি জিরো’ ভিত্তিতে একটি নতুন সভ্যতা গড়ার প্রয়োজন। এই নতুন সভ্যতায় সম্পদ সবার মধ্যে সমানভাবে বণ্টিত হবে এবং কোনো শ্রেণি বা গোষ্ঠী সম্পদ কুক্ষিগত করবে না।”
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর বয়স ২৭ বছরের নিচে। “তরুণদের এই সৃজনশীল শক্তি দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ বিশ্বে টেকসই উন্নয়নের নেতৃত্ব দিতে পারবে। আমাদের পরিবেশ রক্ষায় এবং বিশ্বকে এগিয়ে নিতে তারা বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম,” বলেন ড. ইউনূস।
ড. ইউনূস বিদেশি অতিথিদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আপনারা আমাদের রাস্তাঘাটে ঘুরে দেখুন। তরুণদের ভাবনা ও উদ্যম অনুভব করবেন। তাদের কাছ থেকে শিখে আমাদের উচিত এমন একটি পৃথিবীর স্বপ্ন দেখা, যা পরিবেশগতভাবে নিরাপদ এবং সমতাভিত্তিক।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ কোনো অন্যায় না করেও কঠিন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি, ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা আমাদের ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারে। গত ১০০ দিনের ঘটনাই তার প্রমাণ।”
তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন ১৬ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এর এবারের থিম ‘এ ফ্র্যাকচারড ওয়ার্ল্ড’। অনুষ্ঠানে ৭৭টি সেশনে গবেষক, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশার ৮০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণ করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ বিভিন্ন দেশের অতিথিরা।
ড. ইউনূসের বক্তব্যে উঠে আসে বাংলাদেশকে ন্যায়, মানবাধিকার ও সমতার পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি। তার ভাষায়, “তরুণদের সঙ্গে নিয়ে আমরা নতুন এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি। একসঙ্গে কাজ করলে আমরা সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।”