গত বছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নাটকীয় পরিবর্তনের পর দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন মোড় দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম চমক পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন, যা ভারতের কড়া নজরে রয়েছে।
সোমবার (১৭ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের পর ঢাকা-ইসলামাবাদ সরাসরি বাণিজ্য শুরু করেছে। প্রথম চালানে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করেছে। পাশাপাশি উভয় দেশের মধ্যে বিমান যোগাযোগ পুনরায় চালু হয়েছে, ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে এবং সামরিক পর্যায়ে আলোচনা ও সহযোগিতা বেড়েছে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাস জটিল হয়ে ওঠে। তবে ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার থাকাকালে দুই দেশের সম্পর্ক তুলনামূলক উষ্ণ ছিল। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় সেই দূরত্ব কমতে শুরু করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সাবেক কূটনীতিকদের মতে, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক এখন দুই স্বাভাবিক প্রতিবেশী দেশের মতো হয়ে উঠছে। তবে এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারত সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। বিশেষ করে সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়টি তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কৌশলগত বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা আঞ্চলিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে পারে। পাকিস্তানি শিক্ষাবিদ আয়েশা সিদ্দিকা মনে করেন, এই সম্পর্কের পুনরুজ্জীবন মূলত ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।
সম্প্রতি দুই দেশের সামরিক সম্পর্কও নজরে পড়ার মতো। পাকিস্তানের আয়োজিত বহুজাতিক নৌ মহড়ায় বাংলাদেশ অংশ নিয়েছে, সামরিক প্রতিনিধি দল ইসলামাবাদ সফর করেছে এবং দুই দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনা বেড়েছে।
ভারতের সাবেক কূটনীতিক বীণা সিক্রি মনে করেন, দুই দেশের সম্পর্কের এই উষ্ণতা “ডেজা ভু” তৈরি করছে। তিনি দাবি করেন, অতীতে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বাংলাদেশে ভারতের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর প্রশিক্ষণ দিত বলে অভিযোগ ছিল, যা ভারতকে উদ্বিগ্ন করেছিল।
যদিও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে, তবুও ভারতের কৌশলগত উদ্বেগ রয়ে গেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর পাশাপাশি দুই দেশের ঐতিহাসিক বিতর্কিত বিষয়গুলোরও সমাধান জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নয়ন বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করছে। পাকিস্তানের বিশাল ভোক্তা বাজার বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হতে পারে, যদি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নীতিতে আরও নমনীয়তা আসে।
আগামী মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর এবং বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এই সম্পর্কের গতিপথ আরও স্পষ্ট করবে। তবে ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তারা ঢাকার ওপর তাদের প্রভাব বজায় রাখতে চাইবে।
সুত্রা২৪