অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের সঙ্গে কানামাছি খেলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
রোববার (৪ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঢাকাস্থ নীলফামারী জেলা জাতীয়তাবাদী ফোরামের উদ্যোগে সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম তুহিনের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে রিজভী বলেন, “আজকে মানুষ নানা কথা ভাবছে যে দোসরদের দুধ-কলা দিয়ে পোষা হচ্ছে। তারা হয়ত আপনার সরকারকে বিএনপির বিরুদ্ধে নানাভাবে বুঝাচ্ছে। তারা বুঝাচ্ছে বিএনপিকে দমিয়ে রাখতে হবে। বিএনপির প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে আপনার সরকারের ভূমিকা এমন মনে হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আপনার সরকারের ভেতরে হয়ত কয়েকজন নির্বাচন চায় না। একটা মুলা ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন তারা। ডিসেম্বরে, না হলে ফেব্রুয়ারিতে বা জুনে— এরকম নানা কথা বলছেন। কিন্তু কেউ সুনির্দিষ্টভাবে বলছেন না, অমুক মাসেই নির্বাচন হবে।”
রিজভী বলেন, “নির্বাচন নিয়ে সরকারের তালবাহানা চলছে। দিনকে দিন দেশের ৭১-এর অহংকার এবং ২৪-এর ৫ আগস্টের যে প্রত্যাশা— বহুদলীয়, বহুমাত্রিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা— সেটি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। অনেকে সেই সুযোগ নস্যাৎ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে।”
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, “আজকে ‘মানবিক করিডোর’-এর কথা বলছেন। এই কথা আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে বলতে হচ্ছে। কারণ আপনার জনগণের ম্যান্ডেট নেই, আপনি নির্বাচিত নন। আজ সব দিক থেকে এই প্রশ্ন উঠছে। এর প্রতিক্রিয়া কী হবে, সার্বভৌমত্ব কোথায় দাঁড়াবে— এসব আপনি জনগণের সামনে খোলাসা করেননি। অনির্বাচিত সরকার অনেক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো আপনার সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল। সেই সমর্থনে বলীয়ান না হয়ে আপনারা জনগণের সঙ্গে কানামাছি খেলছেন।”
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল নিয়ে রিজভী বলেন, “ভারত আমাদের পোর্ট ব্যবহার করবে, কিন্তু আমাদের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দিল। অথচ কোনো প্রতিবাদ নেই, উচ্চকণ্ঠ নেই। এটা করলে আমাদের বিকল্প কী— সেটাও জনগণকে জানানো উচিত ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল ছিল যে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার, তারা ক্ষমতায় এসে বিএনপির নেতাদের কলঙ্কিত করার জন্য নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল। সেই মিথ্যা মামলার শিকার শাহরিন ইসলাম তুহিন। রাজনৈতিক কারণে তাঁকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে। যদি অন্যরা রেহাই পায়, তাহলে তুহিন কেন নয়? আইন মন্ত্রণালয় বলেছে কোনো অসুবিধা নেই, তাহলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে আটকে থাকার কথা নয়।”
তিনি অভিযোগ করেন, “আমরা বারবার বলছি— আওয়ামী দোসররা প্রশাসনে ঘাপটি মেরে আছে। তারা গিরগিটির মতো রং বদলাচ্ছে, নিজেদের স্বার্থে কাজ করছে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতে দিচ্ছে না। যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে মুছে দিয়েছিল, তারা এখনো সক্রিয়।”
তিনি বিচারপতি আক্তারুজ্জামানের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “যিনি বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছেন, তিনি এখনো বিচারপতি হিসেবে আছেন— এটা কেমন বিচারব্যবস্থা?”
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন— বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জাহিদুল কবির, যুবদল নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত এবং ছাত্রদল নেতা ডা. তৌহিদ আউয়াল প্রমুখ।