রাজনীতি নয়, বরং ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে রাজধানীর পুরান ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (মিটফোর্ড হাসপাতাল) সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ (৩৯) নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের অগ্রগতি নিয়ে বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস. এন. মো. নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “সোহাগ আগের সরকারের আমলে হাজী সেলিমের ভাতিজা পিল্লু কমিশনারের ছত্রছায়ায় পল্লী বিদ্যুতের চোরাই অ্যালুমিনিয়ামের তারের ব্যবসা করতেন। এসব তার বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে বিক্রি করা হতো, যেখানে অ্যালুমিনিয়ামের হাড়ি-পাতিল-কড়াই তৈরি হয়। গত ১৭ বছর ধরে ভুক্তভোগী সোহাগ এই কাজ করতেন। ৫ আগস্টের পর সে ভোল পাল্টে এদিকে এসেছে। এরপর একই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে আরেকটি গ্রুপ। তখন থেকেই শুরু হয় ব্যবসায়িক বিরোধ এবং পরবর্তীতে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে গড়ায়, যা শেষ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে রূপ নেয়।”
এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য, নির্বাচন বানচাল বা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। এটি ছিল নিছক ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক বিরোধ।”
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, “আমরা এই ঘটনায় মর্মাহত, গভীরভাবে শোকাহত। ঘটনার পরপরই ৯৯৯-এ কল পেয়ে চকবাজার থানার ওসি ফাঁড়িতে খবর দেন। ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সরওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সেখানে অভিযুক্তরা মব সৃষ্টির চেষ্টা করছিল এবং ‘চাঁদাবাজদের জায়গা নাই’ স্লোগান দিচ্ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে দুইজন—মাহবুব ও মহিন—কে আটক করা হয়।”
তিনি জানান, পরবর্তীতে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মোট গ্রেপ্তার ৯ জন। পাথর নিক্ষেপকারী রেজওয়ান উদ্দিন অভিকে পটুয়াখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাবার নাম মনোরঞ্জন বসু ও মায়ের নাম বিউটি দেব মিলা। তিনি ধর্মান্তরিত মুসলিম।
আরও পড়ুন:
- মিটফোর্ডে হত্যার শিকার সোহাগের পরিবারের পাশে বিএনপি
- মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডে সব আসামি শনাক্ত
- মিটফোর্ডে হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে : আসিফ নজরুল
- মামলার এজাহার নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলেন কমিশনার
ডিএমপি জানায়, গ্রেপ্তার আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে মামলার এজাহার নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হয়েছে।
কমিশনার জানান, প্রথমে ভিকটিমের সাবেক স্ত্রী লাকি আক্তার থানায় আসেন এবং একটি খসড়া এজাহার তৈরি করেন, যাতে ২৩ জনের নাম ছিল। পরে ভিকটিমের বড় বোন ও বর্তমানে মামলার বাদী মঞ্জুআরা বেগম থানায় উপস্থিত হয়ে এজাহার দায়ের করেন। তার মেয়ের তোলা খসড়া এজাহারের ছবি পরে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বাদীর লিখিত এজাহারে পাঁচজন বাদ দিয়ে একজন সংযুক্ত করে মোট ১৯ জনকে আসামি করা হয়।
তিনি বলেন, “এজাহার হচ্ছে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী মাত্র। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।”
সোহাগ হত্যাকাণ্ডকে “নারকীয়” উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, “ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। কেউ রাজনৈতিক দলের কর্মী হতে পারেন, কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।”