32.3 C
Dhaka
Wednesday, July 23, 2025

ভাইয়ের ত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া চাকরি সুমির জন্য বেদনার প্রতীক

advertisment
- Advertisement -spot_img

রংপুর | ১৬ জুলাই ২০২৫

শহীদ আবু সাঈদের ছোট বোন সুমি খাতুন। সবচেয়ে আদরের বোনটি। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ভাইকে হারানোর বিনিময়ে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছোট পদে চাকরি পেয়েছেন তিনি। তবে এই চাকরি তার কাছে সম্মানের নয়, বরং তা এক গভীর বেদনার প্রতীক—এমনটাই মনে করেন সুমি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে সেমিনার অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে কাজ করছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কোয়ার্টারে থাকার ব্যবস্থাও হয়েছে তার। সেখানেই কথা হয় সুমির সঙ্গে।

“এই চাকরিটা আমার কাছে বেদনাদায়ক। সবচেয়ে খারাপ লাগে তখনই, যখন ভাবি—ভাইয়ের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমি একটা চাকরি করছি,”
নরম গলায় বললেন সুমি, “কিন্তু কী করবো? জীবন তো থেমে থাকে না। চলার জন্যই নিতে হয়েছে।”

আবু সাঈদের সঙ্গে সুমির বয়সের ব্যবধান মাত্র দেড়-দুই বছর। ছোটবেলা থেকেই দুজনের মধ্যে ছিল এক গভীর টান। লেখাপড়ায় এগিয়ে যাওয়া ভাই সাঈদ সংসারের ভার নিতে শুরু করেন ছাত্রাবস্থাতেই। টিউশনের টাকা দিয়ে মায়ের চিকিৎসা, বাবার হাতখরচ, এমনকি সুমির পড়াশোনাও চালাতেন তিনি।

“আমার মা-বাবা নিরক্ষর। ভাইয়াকে কেউ কখনো পড়তে বলেনি। সে নিজেই নিজের ইচ্ছায় এতদূর এসেছিল। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার,” বললেন সুমি।

ভাইয়ের বন্ধুদের দেখলে আজও আবু সাঈদের স্মৃতি উঁকি দেয় তার মনে। বলেন,

“মনে হয় ভাইয়া থাকলে তাদের সঙ্গেই ক্লাসে যেত, কারও সামনে বা পেছনে বসতো। ওর মতো কেউ আর নেই।”

ভাইয়ের স্নেহের কথা স্মরণ করে বলেন,

“ভাইয়া বলেছিল—তোর যা লাগবে, আমাকে বলবি। এমনকি পাড়ার এক দোকানে বলে গিয়েছিল, আমি যা চাই তা যেন বাকিতে দিয়ে দেয়। ভাইয়া পরে এসে শোধ দিতো।”

সেই ভয়াল দিনের স্মৃতিচারণা করে সুমি বলেন,

“গত বছরের কোরবানি ঈদের দুদিন পর ভাইয়া রংপুরে ফেরে। তার আগে শেষবারের মতো দেখা হয়েছিল। ঈদের দিনও কথা হয়েছিল ফোনে। সে বলেছিল, বৃহস্পতিবার বিকেলে আসবে। সেদিন আমাকে যেতে বলেছিল… কিন্তু আর আসা হয়নি ভাইয়ার।”

১৬ জুলাই ২০২৪, গণঅভ্যুত্থানের দিনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আবু সাঈদ। সেদিন সুমি ছিলেন বড় বোনের বাড়িতে। দুপুরে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিতে গিয়েই ফোন পান—ভাই নিহত হয়েছেন।

“বিশ্বাসই হয়নি। ভাবছিলাম—আবু সাঈদ তো কখনো কারও সঙ্গে ঝামেলা করতো না, পুলিশ কেন তাকে গুলি করবে?” বলেন তিনি।

ভাইয়ের মরদেহ দেখে বুক ফেটে কান্না আসে সুমির।

“ভাবছিলাম, কতটা আঘাত পেলে একটা সুস্থ মানুষ এমনভাবে মারা যায়? ভাইয়া এত আঘাত পেয়েও টলেনি—আমার কথা কি একবারও মনে হয়নি ওর?”

তবু আজো সুমিকে সাহস জোগায় তার ভাইয়ের বন্ধুরা।

“ওরা বলে—‘আমরা একেকজন আপনার ভাই।’ এটা শুনে ভালো লাগে। কিন্তু… ভাইয়া তো একজনই ছিলেন।”

সুমি আজও ভাইয়ের স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচছেন। চাকরি আছে, থাকার জায়গাও আছে। কিন্তু তার হৃদয়ের শূন্যস্থানটা আজও পূর্ণ হয়নি।

“আজ হয়তো অনেক ভাই পেয়েছি, কিন্তু কেউই আবু সাঈদ ভাইয়ার মতো না…”

সর্বশেষ সংবাদ
- Advertisement -spot_img
আরও নিউজ