সোমবার দুপুর। রাজধানীর দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে তখনো ছোট ছোট ছেলেমেয়ে তাদের ক্লাসে বসে পড়াশোনা করছিল। প্রথম শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত ছিল বইয়ের পাতায় চোখ রাখায়। ঠিক সেই সময়, দুপুর ১টা ১৫ মিনিট।
হঠাৎ আকাশ থেকে ছুটে আসা একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে আছড়ে পড়ল স্কুলের মূল গেটের সামনে। মুহূর্তের মধ্যে সব কিছু উল্টেপাল্টে গেল।
বিধ্বস্তের সঙ্গে সঙ্গে এক ভয়ংকর বিস্ফোরণ। আগুনের লেলিহান শিখা স্কুলের কক্ষগুলোতে ঢুকে পড়ল।
কেবল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তীব্র তাপ ও ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে যেতে থাকল ভেতরে থাকা শিশুগুলো। পিঠে বইয়ের ব্যাগ, হাতে খাতাপত্র নিয়ে যে বাচ্চারা স্বপ্ন দেখছিল জীবনের, তারা তখন পুড়ে ছোটাছুটি করছে বাঁচার জন্য। কিন্তু এতটুকু শরীর নিয়ে, এমন ভয়ংকর আগুনের সামনে তাদের আর কিছুই করার ছিল না। কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ছিল একের পর এক।
দুপুর পেরিয়ে বিকেলের দিকে যখন আহতদের নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে, তখন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের করিডর যেন কেবল আহাজারির এক সমুদ্র। কারো কপাল পুড়ে গেছে, মাথা ফেটে গেছে, কেউ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। কেউ বারবার মূর্ছা যাচ্ছিল। ঘটনাস্থলে অনেকেই ছুটে বেড়াচ্ছিলেন সন্তানদের খোঁজে। কারো কণ্ঠে কোনো সান্ত্বনা নেই— কেবল চারপাশে কান্না আর হাহাকার।
প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে ১৯ ছুঁয়েছে। আহত শতাধিক শিশু ও অভিভাবক হাসপাতালে শুয়ে কাতরাচ্ছে। বাতাসে ধোঁয়ার গন্ধ মিশে গেছে কান্নার শব্দে। ক’জনের সন্তান আর বাড়ি ফিরবে না, ক’জন ফিরলেও আর আগের মতো হাসতে পারবে না— এমন প্রশ্নের উত্তর নেই কারো কাছে।
দুর্ঘটনার ভয়াবহতায় শোকে আচ্ছন্ন পুরো দেশ। আগামীকাল মঙ্গলবারের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক।
কিন্তু এ শোক কি মুছে দিতে পারবে সন্তানদের বুকের পোড়া দাগ?
কিংবা ক’জন বুকে সান্ত্বনা নিয়ে ঘুমাতে পারবে?
আজ এই বাতাসে কেবল হাহাকার, আর একটি নির্দয় প্রশ্ন— এ অন্যায় যন্ত্রণার সান্ত্বনা মিলবে কিসে?