সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর দ্বিতীয় সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। বুধবার (২৩ জুলাই) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরীর স্বাক্ষরে এই অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
নতুন সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারী আন্দোলনে অংশ নিলে বা অপর একজন কর্মচারীকে কাজে বাধা দিলে, তাকে বাধ্যতামূলক অবসর কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছে।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, যদিও অধ্যাদেশে সরাসরি ‘আন্দোলন’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়নি, তবে ভাষাগত কাঠামোয় পরিষ্কারভাবে আন্দোলনের ইঙ্গিত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট আচরণকে “সরকারি কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই অধ্যাদেশটি “সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫” নামে অভিহিত হবে এবং এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
🔹 অধ্যাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ:
✅ ধারা ৩৭(ক): সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান
১. কোনো সরকারি কর্মচারী যদি:
- (ক) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য করেন,
- (খ) সমবেতভাবে কর্ম থেকে বিরত থাকেন বা অন্যদের বিরত থাকতে উস্কানি দেন,
- (গ) অন্য কোনো কর্মচারীকে তার কর্তব্য পালনে বাধাগ্রস্ত করেন—
তবে তা হবে সরকারি কর্মে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী অসদাচরণ, এবং এজন্য তাকে নিচের যেকোনো শাস্তি দেওয়া যাবে:
- (ক) নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ
- (খ) বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান
- (গ) চাকরি হতে বরখাস্ত
২. যদি এ ধরনের অভিযোগ ওঠে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ গঠন করবেন, এবং সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে ৭ (সাত) কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে নোটিশ প্রদান করবেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি চাইলে ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন করতে পারবেন।
🛑 আপিল নিষিদ্ধ, কেবল রিভিউ সম্ভব
এই অধ্যাদেশের অধীনে রাষ্ট্রপতির দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। তবে, দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী আদেশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে রিভিউ আবেদন করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক দেওয়া রিভিউ আদেশই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হবে।
এই অধ্যাদেশ কার্যকরের ফলে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন, কর্মবিরতি বা বিক্ষোভে অংশগ্রহণ আরও নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলে সরকারের ব্যাখ্যা, তবে গণতান্ত্রিক অধিকার ও কর্মস্থলের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়েছে।