আওয়ামী লীগ আয়নাঘরের চাইতেও ভয়াবহ বিভিন্ন ধরনের বিভীষিকাময় ঘর তৈরি করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
আজ মঙ্গলবার আমরা বিএনপি পরিবারের উদ্যোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত রিকশাচালক সাইফুল ইসলামকে নতুন রিকশা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘আবরারকে তারা হত্যা করল। কত কাহিনী আমরা প্রতিদিন শুনেছি। শুধু কি আয়না ঘর? আমরা তো শুনেছি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৈরি করা আয়না ঘরের কথা। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি কেউ কেউ আট বছর পর, ১০ বছর পর আয়না ঘর থেকে বের হচ্ছেন। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আইনজীবী, ব্যারিস্টার ৯ বছর ১০ বছর পর তারা সেখান থেকে বের হচ্ছেন। কি নির্মমতা শেখ হাসিনা তৈরি করেছিলেন বাংলাদেশে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা তো একটা দিক। আয়না ঘরের চাইতেও ভয়াবহ আরও বিভিন্ন ধরনের বিভীষিকাময় ঘর তৈরি করেছিলেন আওয়ামী লীগের এমপি নেতারা। আজকেই খবরের কাগজে দেখতে পেলাম সেই বিখ্যাত আলতাফ গোলন্দাজ। যিনি পা ওপরের দিকে ঝুলিয়ে মাথা নিচু করে বিএনপির এক নেতাকে ১৯৯৬-৯৭ সালে পিটিয়েছিলেন। সেই ভয়ংকর আলতাফ গোলন্দাজের ছেলে ফাহিম গোলন্দাজ তার একটি আয়না ছিল। তিনি ভয়ংকর কুকুরের ফার্মের মধ্যে তার মতের বিরোধীদেরকে ছেড়ে দিত। এমনকি তার দলের লোকও যদি কেউ তার বিরুদ্ধে যেতের তার সঙ্গে এমন নির্মম আচরণ করা হত।’
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদেরকে এখনো বাতিল করা হচ্ছে না কেন, উপদেষ্টা পরিষদের কাছে এমন প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সবাই আমরা সমর্থন করেছি। জুলাই বিপ্লবের ফসল হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে দেশে যারা এই ধরনের নিপীড়নের জন্য এক একটা আয়নাঘর তৈরি করেছিল। তাদের অংশ তো এখনো রয়ে গেছে। ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে আপনারা এখনো বাতিল করছেন না কেন? এরাও তো সেই আওয়ামী লীগের গুণ্ডা, পাণ্ডা, সন্ত্রাসী। এলাকার মধ্যে তারাই তো বর্বরতা চালিয়েছে। আপনাদের ভয় কিসের? উপদেষ্টা পরিষদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই আপনাদের ভয় কিসের? কারা আপনাদেরকে নিষেধ করছে?’
রিজভী বলেন,‘মেধাবী ছাত্র আবরারকে হত্যা করেছিল ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ নামের আগে ছাত্র শব্দটি আছে। শেখ হাসিনা এসব ছাত্র পছন্দ করে না। শেখ হাসিনা বুয়েট বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করে না, মেধাবী ছাত্র পছন্দ করে না। দেশ টিকে থাকল কি না টিকে থাকল, এটা তো তার দরকার নেই। তাকে টিকিয়ে রাখবে পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা। এই সংস্থা তাকে টিকিয়ে রাখবে এটা তিনি বিশ্বাস করতেন। তাই গোল্লায় যাক বাংলাদেশের মেধাবী ছাত্র। সেজন্য প্রথমেই কোটা বৃদ্ধি করে মেধার সর্বনাশ ডেকে এনেছিলেন তিনি। মেধাবী ছেলেরা প্রশাসনে আসবে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তারা অবস্থান নিবেন এইটা শেখ হাসিনার পছন্দের মধ্যেই পড়ে না। তার দরকার কি? তাকে তো সহায়তা করবে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে।’
সম্প্রতি গার্মেন্টস সেক্টরে অস্থিরতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টসের মালিক যারা শেখ হাসিনার অত্যন্ত সুবিধাভোগী তাদের গার্মেন্টসের লোকেরা এসে অন্যান্য গার্মেন্টস যারা নিরপেক্ষ তাদের হামলা করছে। এটাতো তথ্য নিয়ে আপনাদেরকে বলছি। নজরুল ইসলাম কে? সালাম মুর্শিদি এরা কি আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী নয়? এরা কি আওয়ামী লীগের এমপি নয়? এদের গার্মেন্টস থেকে এসে কৃত্রিমভাবে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরি করছে। যাতে ছাত্র-জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব মিথুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফুর রহমান তুষারসহ আরও অনেকে।