চট্টগ্রামের আদালতে ইসকনের (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরের পর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবী মারা গেছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় ৬-৭ জনকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়, যাদের মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। নিহত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। তাঁর শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল।
নিহত সাইফুল ইসলাম চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন বলে জানান আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর এনামুল হক।
গত সোমবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরে তাঁকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে তোলা হলে আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে।
শুনানি শেষে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে চিন্ময়কে প্রিজনভ্যানে তোলার সময় তাঁর অনুসারীরা বাধা দেয়। এতে প্রিজনভ্যানটি আদালত চত্বর থেকে বের হতে পারেনি। প্রায় তিন ঘণ্টা ভ্যান আটকে রাখার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষ চলাকালে আদালত এলাকার মসজিদসহ বেশ কিছু স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে।
কোতোয়ালি থানার ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও উত্তেজনা পুরোপুরি কমেনি।
দুপুর ১২টা থেকে কয়েকশো নারী-পুরুষ চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভকারীরা ছত্রভঙ্গ হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় আদালত ভবনসহ আশপাশের এলাকা। চিন্ময়কে পুলিশের কড়া পাহারায় চট্টগ্রাম কারাগারে নেওয়া হয়েছে।
এক সেবাপ্রার্থী এনামুল হক অভিযোগ করেন, জমি রেজিস্ট্রির জন্য আদালতে যাওয়ার সময় ইসকনের কর্মীরা তাঁর ওপর হামলা চালায়।
পুলিশ জানিয়েছে, চিন্ময়কে আদালতে তোলার সময় তাঁর পক্ষে ৫১ জন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। আদালত চত্বরে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল।
আদালত এলাকা ও আশপাশে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করছে।