জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে পুরো ক্যাম্পাসে। ডাকসুর রোডম্যাপ, নির্বাচন কমিশন, তফসিল ও তারিখ ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ, অনশন, অবস্থান কর্মসূচি চলেছে মাসের পর মাস।
গত ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসুর টাইমলাইন ঘোষণা করলে সে অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হয়। অবশেষে ১৬ জুন ডাকসু নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রশাসন জানিয়েছে, আগস্টের মাঝামাঝি ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এখন শুধু তফসিল ঘোষণা ও ভোটার তালিকা তৈরির কাজ বাকি।
অতীতের অচলাবস্থা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত ৩৭ বার ডাকসু নির্বাচন হয়েছে, যার মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশে মাত্র ৮ বার। প্রতিবছর নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৯ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর দীর্ঘ পাঁচ বছর কোনো নির্বাচন হয়নি।
এবার শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
শিক্ষার্থীরা চান স্বচ্ছ, গণতান্ত্রিক ও কার্যকর ডাকসু। তারা চান—
- অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন
- নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন
- প্রশাসনের মানবিক ভূমিকা
- কাঠামোগত সংস্কার
- নিয়মিত নির্বাচন
ডাকসু যেন একাডেমিক সমস্যা, সিট বণ্টন, যৌক্তিক দাবিতে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়, নারী ও প্রান্তিক শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেও কার্যকর হয়, সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য:
রায়হান আহম্মেদ সিব্বির (লোকপ্রশাসন, ২০২০-২১):
“এবারের ডাকসু নির্বাচন কেবল একটি ভোটের আহ্বান নয়, এটি ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এক গণতান্ত্রিক চরমপত্র। আমরা চাই ইতিহাস-সচেতন, অংশগ্রহণমূলক ও আধুনিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ডাকসু।”
আশরাফুর রহমান (রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ২০২২-২৩):
“আমি চাই একটি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও জবাবদিহিমূলক ডাকসু। যেখানে থাকবে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব এবং অংশগ্রহণমূলক নেতৃত্ব।”
নুসরাত জাহান (প্রিন্টিং ও পাবলিকেশন, ২০২৩-২৪):
“আমি চাই এমন একটি ডাকসু, যা হবে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিবেদিত এবং যেখানে রাজনৈতিক প্রভাব থাকবে না।”
আহসান খান (নৃবিজ্ঞান, ২০২২-২৩):
“ডাকসু হোক শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার প্রধান মাধ্যম। ছাত্রত্বহীন নেতৃত্বের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।”
উম্মে সালমা (ইংরেজি, ২০২০-২১):
“ডাকসু কেবল রাজনৈতিক নয়, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, বিতর্ক, গবেষণা ও নেতৃত্ব গঠনের জবাবদিহিমূলক প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠুক।”
সারসংক্ষেপ:
শিক্ষার্থীদের ভাষায়, এবারের ডাকসু নির্বাচন কেবল একটি সাংগঠনিক কার্যক্রম নয়, এটি নতুন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য এক চূড়ান্ত লড়াই। তারা চান, ডাকসু হোক গণতন্ত্র চর্চার প্রাণকেন্দ্র, যা হবে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বপ্নের সুরক্ষক।