নিজস্ব প্রতিবেদক:
পহেলা বৈশাখ—বাঙালির প্রাণের উৎসব। আর এই উৎসবের অন্যতম প্রতীক ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। তবে ২০২৫ সালের নববর্ষ উদযাপনের প্রাক্কালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। আর তাতেই চরম অসন্তোষ জানাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১৩ এপ্রিল) সকালে চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই ক্ষোভ জানান এবং এই নাম পরিবর্তনের পিছনে ‘যৌক্তিক ব্যাখ্যা’ দাবি করেন আয়োজক কমিটির কাছে।
‘শিক্ষার্থীর মতামতকে উপেক্ষা’
চারুকলার প্রিন্ট মেকিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাহরা নাজিফা বলেন,
“মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই নেওয়া হয়েছে। এটি হতাশাজনক ও অগণতান্ত্রিক।”
তিনি আরও বলেন, শোভাযাত্রার প্রতীক বা মোটিফ তৈরির দায়িত্ব এবার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সরিয়ে শিক্ষকদের হাতে দেওয়া হয়েছে, এবং একে শিক্ষাক্রমভুক্ত কোর্স হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে—এ সিদ্ধান্তেও শিক্ষার্থীদের কোনো মতামত ছিল না।
‘রাজনৈতিক ব্যাখ্যা অগ্রহণযোগ্য’
নাজিফা বলেন, “কিছু পক্ষ ‘মঙ্গল’ শব্দের মধ্যে রাজনৈতিক ইঙ্গিত খুঁজছেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে জুলাই মাসে, বৈশাখের পরে। অতএব এটিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যাখ্যা করা ভিত্তিহীন।”
প্রাক্তন শিক্ষার্থী জাহিদ জামিল জানান, “আমরা আশা করেছিলাম নাম পরিবর্তন হবে না। ডিন স্যারের কথাতেই তা বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে অজুহাত দেখিয়ে নাম বদলে ফেলা হয়েছে—যা হতাশাজনক।”
আলোচনার আহ্বান
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা আলোচনা ও সমঝোতার জন্য প্রস্তুত। ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যেন শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব ও মতামত গুরুত্ব পায়, সে দাবি জানানো হয়। তারা সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নেরও দাবি তোলেন।
🔍 পটভূমি: মঙ্গল শোভাযাত্রা
- শুরু: ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে
- ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর ‘Intangible Cultural Heritage’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত
- প্রতীক: শুভ, শান্তি ও অসাম্প্রদায়িকতার রূপক
প্রশ্ন এখন—শুধু নাম বদল নয়, বদলে যাচ্ছে কি এই ঐতিহ্যের দর্শনও?
শুভ নববর্ষের শুরুর আগেই বিতর্ক ছুঁয়ে গেল মঙ্গল-অনুষ্ঠানের মর্মস্থলে।
সুত্রা২৪