ক্লাসে অনুপস্থিত থাকলেও নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সাহাদাত আলী সবুজ। এতে কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।
জানা গেছে, সাহাদাত আলী ভেড়ভেড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৯ সালে তার আপন মামা আবুল হাসান মাহমুদ আলী নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িত হন। সরকারি চাকরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও তিনি একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর বিএনপির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও চাঁদাবাজির অভিযোগে খানসামা থানায় দায়ের হওয়া এক মামলায় সাহাদাত আলী সবুজকে আসামি করা হয়। মামলার পর থেকেই তিনি কলেজে অনুপস্থিত, তবে নিয়মিত বেতন উত্তোলন ও গোপনে দাপ্তরিক কার্যক্রম, আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (১২ মে) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে প্রায় ১,৫০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকলেও অনেক কক্ষে ক্লাস না হওয়ায় সময় কাটাচ্ছেন অলসভাবে।
কলেজ সূত্র জানায়, বর্তমানে ৬ সদস্যের একটি কমিটি ভর্তি, ফরম পূরণ, অভ্যন্তরীণ ও ইনকোর্স পরীক্ষা এবং শৃঙ্খলাসহ কলেজের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে অধ্যক্ষ না থাকায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো ঝুলে থাকে এবং জরুরি কাগজপত্রে স্বাক্ষরের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কেউ কেউ গোপনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বাক্ষর নিচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষক ও কর্মচারীরা জানান, প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুপস্থিতি পাঠদান ও দাপ্তরিক কাজের গতি রুদ্ধ করেছে। তাঁরা মোবাইল ফোনে নির্দেশনা নিয়ে চলতে বাধ্য হচ্ছেন। মামলার আসামি হওয়ায় তিনি সরাসরি কলেজে না এলেও প্রভাব খাটিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অধ্যক্ষ সাহাদাত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছুটিতে আছেন জানিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু না বলেই ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে খানসামা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজমূল হক বলেন, “অধ্যক্ষ সাহাদাত আলী সবুজ এজাহারনামীয় পলাতক আসামি। তাকে গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) রংপুর অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক আমির আলী বলেন, “এখনই কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। কলেজটি পরিদর্শন ও তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”