ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীর অধীনস্থ ‘জেনারেল সেক্রেটারিয়েট ফর ডিফেন্স অ্যান্ড ন্যাশনাল সিকিউরিটি’-এর প্রকাশিত নতুন কৌশলগত জাতীয় পর্যালোচনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপে একটি ‘বড় যুদ্ধ’ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যদিও মস্কো ইউরোপে আক্রমণের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে আসছে, তথাপি নথিতে ইরান, চীন, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং সাইবার ও সংগঠিত অপরাধের পাশাপাশি রাশিয়াকে প্রধান হুমকি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ‘রাশিয়ান হুমকি’, ‘রাশিয়ান আগ্রাসন’— এসব শব্দ ৫০ বারেরও বেশি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ফ্রান্স ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়ার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
এতে বলা হয়, “আমরা একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছি… যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে ইউরোপে একটি বড় ধরনের উচ্চ-তীব্রতার যুদ্ধের ঝুঁকি রয়েছে।”
পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, “ফ্রান্সের স্বার্থ, তার অংশীদার ও মিত্রদের স্বার্থ এবং ইউরোপীয় মহাদেশ ও ইউরো-আটলান্টিক অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য রাশিয়া সবচেয়ে সরাসরি হুমকি।” এতে মস্কোর বিরুদ্ধে সাইবার আক্রমণ, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ এবং হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এছাড়াও সতর্ক করা হয়েছে, রাশিয়া মলদোভা, বলকান অঞ্চল বা পূর্ব ইউরোপের ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারে।
চীন ও ইরানকেও ‘কৌশলগত হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। ইরানকে ‘মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীলকারী’ এবং চীনকে ‘বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাকারী’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।
পর্যালোচনার উপসংহারে বলা হয়েছে, ফ্রান্সকে অবশ্যই তার সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করতে হবে এবং অর্থনীতিকে ‘যুদ্ধ প্রস্তুতি’ মোডে স্থানান্তর করতে হবে। সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় ফ্রান্সসহ পুরো ইউরোপজুড়ে নতুন বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই পর্যালোচনা ইউরোপে সামরিকীকরণের বৃহৎ বিস্তারের মধ্যেই প্রকাশিত হলো। ব্রাসেলস সম্প্রতি ৮০০ বিলিয়ন ইউরোর ‘Rearm Europe’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যরা প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ৫% পর্যন্ত বাড়াতে সম্মত হয়েছে— যাদের দাবি, এসব পদক্ষেপ ‘রাশিয়ার হুমকি’র প্রেক্ষাপটে গ্রহণ করা হয়েছে।
রাশিয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, পশ্চিমারা তাদের সামরিক বাজেট বাড়ানোর যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠায় রাশিয়াকে ‘উসিলা’ হিসেবে ব্যবহার করছে।