পিছিয়ে পড়া নারীরাই সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার

রাবেয়া বেবী

সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীরাই সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। যদিও সরকার ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এসব নারীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে, তবু পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। তবে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখনো তাদের উন্নয়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এমন বাস্তবতায় ‘কন্যা, জায়া, জননী: অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন’ প্রতিপাদ্যে আজ দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।

২০০৭ সাল থেকে প্রতিবন্ধী নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে ‘উইমেন ইউথ ডিজঅ্যাবিলিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (WDDF)’। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি জানান, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী নারীরাই সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার।

দলিত নারী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মণি রানী দাস ও আদিবাসী সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশনের নারী নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব ফালগুনী ত্রিপুরা বলেন, পিছিয়ে পড়া নারীদের শিক্ষার সুযোগ, কর্মসংস্থান, দক্ষতা উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগ অপ্রতুল। তারা আরও বলেন, এই নারীরা যৌন সহিংসতা, ধর্ষণ, নির্যাতন এবং সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

গাজীপুরের একটি বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিদর্শনে দেখা গেছে, সেখানে ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ৭৫ জন নারী রয়েছেন। কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক মাহমুদা আক্তার বলেন, ‘আমাদের দেশে পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন থাকলেও প্রবীণ নারীদের পরিবারের সঙ্গে শেষ সময় কাটানোর সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।’

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, দেশে ৩৮ লাখের বেশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছেন, তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে এই সংখ্যা ২ কোটির বেশি। যার অর্ধেকের বেশি নারী।

দলিত নারী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মণি রানী দাস জানান, শহরের দলিত প্রবীণ নারীরা বয়স্ক ভাতা পেলেও গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা এ সুবিধা পান না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার দলিত নারীরা সঠিক বিচার পান না।

আদিবাসী নারীদের পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। ফালগুনী ত্রিপুরা বলেন, ‘আদিবাসী নারীদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা কম, তারা কর্মসংস্থানে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।’

জাতীয় মহিলা সংস্থা ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান জানান, ‘সব প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী, দলিত ও আদিবাসী নারীরা যুক্ত হতে পারেন। তবে তাদের জন্য আলাদা কোটা বা বিশেষ উদ্যোগ নেই।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘বর্তমান ভাতার পরিমাণ কম এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এটি বাড়ানো দরকার।’

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে আনতে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও অর্থনৈতিক সহায়তার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’

সমাজকল্যাণ ও মহিলা শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘প্রতিবন্ধী নারীদের সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টার বাণী

নারী দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘নারীদের সম্ভাবনা ও কর্মদক্ষতাকে উৎপাদনমুখী কাজে সম্পৃক্ত করে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের নারীরা উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে—এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’

নারী দিবসের কর্মসূচি

নারী দিবস উপলক্ষে গতকাল (শুক্রবার) রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সভা, সেমিনার, মানববন্ধন, র‍্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

• জাতীয় প্রেস ক্লাবে নারীপক্ষ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম জুলাই অভ্যুত্থানে নারী সহযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।
• ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টার ও গ্রিন বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করার দাবি জানিয়েছে।
• আজ (শনিবার) সকালে মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সমাবেশ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মূল অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।

সুত্রা২৪