নারী বিরোধী শক্তিকে প্রতিহত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “নারী বিরোধী যে কোনো অপশক্তিকে আমরা দেশের সকল মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলা করব।”
শনিবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের সমাজে এখনো অনেক মানুষ আছেন, যারা নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর বদলে তাদের হেয় করে দেখে। এটি বদলাতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ এবং বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে প্রতিটি সংগ্রামে নারীরা সামনে থেকেছে, অথচ তারা এখনো পিছিয়ে আছে। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য সরকার নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছে। দুস্থ মায়েদের জন্য আর্থিক সহায়তা, কর্মজীবী নারীদের আবাসন, প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, ডে কেয়ার সেন্টারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “অনেক নারী নির্যাতনের শিকার হলেও কোথায় অভিযোগ জানাতে হবে, তা বুঝতে পারেন না। তাই সরকার একটি হটলাইন চালু করেছে, যাতে নির্যাতিত নারীরা সহজেই সহায়তা পেতে পারেন।”
তিনি জানান, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ হালনাগাদ করা হচ্ছে এবং যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০২৫ প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, যা প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান করবে।
‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ এ নারীদের ঐতিহাসিক অংশগ্রহণ
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “কয়েকদিন আগে আয়োজিত ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ এ নারীদের অংশগ্রহণ ছিল ঐতিহাসিক। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২৭ লাখ ৪০ হাজার মেয়ে অংশ নেয়, যেখানে ৩ হাজারেরও বেশি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।”
তিনি বলেন, “এই বিপুল সংখ্যক অংশগ্রহণ প্রমাণ করে যে, নারীর অধিকার ও অংশগ্রহণ প্রতিষ্ঠায় পুরুষদেরও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন রয়েছে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আজকের বিশ্বে নারীরা যে অধিকার ভোগ করছে, তা আন্দোলন ও সংগ্রামের ফল। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সূচনা হয়েছিল নারীদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকারের দাবিতে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশেও নারীরা যুগ যুগ ধরে সংগ্রাম করেছে। তেভাগা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত নারীসমাজ সাহসী ভূমিকা রেখেছে।”
তবে, অনেক বীর নারীর অবদান আজ ভুলে যাওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নারী নেতৃত্বকে কখনো ভুলবো না। তারা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণা।”
সমাজ পরিবর্তনে পুরুষদের অংশগ্রহণের আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে হলে পুরুষদেরও এগিয়ে আসতে হবে। নতুন বাংলাদেশে আমরা এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে চাই, যেখানে পরিবারগুলো সমতার ভিত্তিতে গঠিত হবে।”
তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “নারীদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সমর্থন ও সম্মান জানানো—এটাই আমাদের নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার।”
সুত্রা২৪