পাবনার সুজানগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলায় জামিন নিতে গিয়ে ১২ জন নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে পাবনা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের (আমলি আদালত-২) বিচারক মো. মোস্তাফিজুর রহমান এ আদেশ দেন।
যাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে তারা হলেন:
- গোলাম আজম (৫২), সিনিয়র সহসভাপতি, তাতিবন্ধ ইউনিয়ন বিএনপি
- ফারুক শেখ (৩৫), ভবানীপুর
- রুহুল আমিন (৩৭), কামারদুলিয়া
- জাবেদ (৩২), ভবানীপুর
- রঞ্জু খাঁ (৩২), ক্রোড়দুলিয়া
- আইয়ুব আলী (৩২), কোড়দুলিয়া
- রাজ্জাক বিশ্বাস (৪২), উদয়পুর
- হাসু বিশ্বাস (২৮), মজিবর বিশ্বাসের ছেলে
- বিল্লাল শেখ (৩২), চন্ডিপুর
- শরিফুল ইসলাম (২৮), মন্টু মাস্টারের ছেলে
- মজিবর রহমান খান (৪৭), সাবেক ইউপি সদস্য, মধুপুর
- সাইফুল ইসলাম (২৮), কামারদুলিয়া
তারা সবাই বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী এবং সদস্য সচিব শেখ আব্দুর রউফের অনুসারী বলে জানা গেছে।
আদালত সূত্র জানায়, দুপুরে পাবনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকারের মাধ্যমে কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের অনুসারী সুজানগর উপজেলা বিএনপি সদস্য সচিব শেখ আব্দুর রউফসহ তার অনুগত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলায় রউফ শেখ ছাড়া ১২ জন নেতাকর্মী জামিনের জন্য হাজির হন। তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। আরেকজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা থাকায় তার জামিন মঞ্জুর করা হয়। বাকিরা পরিস্থিতি বুঝে আদালত চত্বর ত্যাগ করেন।
এর আগে, গত ৯ জুলাই সুজানগর পৌর বাজারের নন্দিতা সিনেমা হলের সামনে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপ— কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন ও সাবেক এমপি সেলিম রেজা হাবিবের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে শেখ আব্দুর রউফসহ ১৫-২০ জন আহত হন। গুরুতর অবস্থায় রউফকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় আহত রউফের ছেলে আদনানুর রউফ রুদ্র বাদী হয়ে ১১ জুলাই রাতে সুজানগর পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান খাঁকে প্রধান আসামি করে ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় নয়ন খা নামে একজন গ্রেপ্তার হন।
অন্যদিকে চর ভবানীপুরের আব্দুর রশিদের স্ত্রী কাজলী খাতুন শেখ আব্দুর রউফকে প্রধান আসামি করে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে পাল্টা মামলা করেন। আজকের জামিন আবেদন সেই মামলারই প্রেক্ষিতে করা হয়।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় অস্ত্র হাতে কয়েকজন নেতাকর্মীর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে বিএনপি তিন সদস্যের তদন্ত দল সুজানগরে পাঠায় এবং ঘটনাস্থল থেকে ছবি-ভিডিও সংগ্রহ করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়। ইতোমধ্যে শেখ আব্দুর রউফ গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে থাকলেও তাকে ও তার পক্ষের ১০ নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার বলেন, “এই মামলা জামিনযোগ্য। পরে আবার জামিনের আবেদন করলে আমরা আশা করি, তা মঞ্জুর হবে।”
বেড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, “উভয় পক্ষ পৃথক মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে এবং অস্ত্র উদ্ধারের দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”