সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সামলানো যাচ্ছে না, সাধারণ মানুষ কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। তাই দেরি না করে দ্রুত নির্বাচন দিন এবং সম্মানের সঙ্গে বিদায় নিন।”
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌর শহরের টেংগাপাড়া এলাকায় বিএনপির আয়োজিত গণসংবর্ধনায় এসব কথা বলেন তিনি।
গণসংবর্ধনায় বাবরের বক্তব্য
বাবর বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকার মিথ্যা মামলায় আমাকে ১৭ বছর কারাগারে আটকে রেখেছিল। শুধু আমি নই, পুরো দেশকে কারাগারে পরিণত করেছিল। এখন মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস নিচ্ছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর যে দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নানা ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে, কোনো ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না। আমাদের নেতা তারেক রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করেই সকল আন্দোলন পরিচালিত হবে। প্রয়োজনে রাজপথে নামতে হবে।”
তিনি আরও দাবি করেন, “কারাগারে থাকাকালে আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ানোর চেষ্টা করেছিল। তারা ব্যর্থ হয়েছে, কারণ আমি কখনো সত্য থেকে বিচ্যুত হইনি।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার বিষয়ে বাবর বলেন, “ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অতীতেও বিএনপি আপনাদের নিরাপত্তা দিয়েছে, ভবিষ্যতেও দেবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে সরকারি-বেসরকারি চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে, উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ানো হবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সেলিম কার্নায়েন এবং সঞ্চালনা করেন আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব টিপু সুলতান। এছাড়াও বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী, সাবেক সংসদ সদস্য আশরাফ উদ্দিন খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান তালুকদার, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাসুদ চৌধুরী, যুবদল নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন খান, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মাসুম ও সদস্যসচিব গোলাম রাব্বানী।
লুৎফুজ্জামান বাবর নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি) আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
২০০৭ সালে গ্রেপ্তারের পর বিভিন্ন মামলায় তার সাজা হয়, যার মধ্যে দুটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড ও একটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ছিল। ধাপে ধাপে মামলায় খালাস পাওয়ার পর গত ১৬ জানুয়ারি তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
মুক্তির পর চিকিৎসা ও ওমরাহ পালন শেষে গত রোববার নেত্রকোনায় ফিরে গণসংবর্ধনা গ্রহণ করেন। এরপর সোমবার খালিয়াজুরিতে এবং মঙ্গলবার মোহনগঞ্জে আরও দুটি সংবর্ধনায় অংশ নেন।
গণসংবর্ধনায় নেত্রকোনা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আব্দুল মান্নান তালুকদার বলেন, “লুৎফুজ্জামান বাবর ভাটি বাংলার সিংহপুরুষ। তিনি শুধু নিজের নির্বাচনী এলাকায় নয়, পুরো জেলায় মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তাই দলমত নির্বিশেষে সবাই তাকে ভালোবাসেন।”
সংবর্ধনা শেষে রাতেই বাবর ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
সুত্রা২৪