বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মন্তব্য করেছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার ফলে জনগণের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেছেন, “এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক যন্ত্র ব্যবহার করার নানা লক্ষণ ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে, যা দেশের গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।”
আজ শনিবার (২২ মার্চ) সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এতে তিনি আরও জানান, “দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশের জনগণ গণঅভ্যুত্থান করবে, যা ফ্যাসিবাদ মুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হবে।”
ফখরুল ইসলাম বলেন, “এই গণঅভ্যুত্থানের ফলস্বরূপ একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আশা বাংলাদেশের জনগণ পোষণ করছে। বিএনপি ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য ৩১ দফা প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে, যার ভিত্তিতে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে সংস্কারের কাজ শুরু হবে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি সংস্কার প্রস্তাব সাংবিধানিক ও আইনি ভিত্তি গ্রহণ করে নির্বাচিত সংসদে গ্রহণ করতে হবে। এই জাতীয় ঐক্য এবং জনগণের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে পরিচিত ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনকে ধরে রাখতে হবে।”
এছাড়া তিনি বলেছেন, “সংস্কারের লক্ষ্য হলো জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। নির্বাচনের আগে সংস্কারের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। সংস্কার প্রক্রিয়া চলমান থাকলে, নির্বাচন এবং সংস্কার দুটোই একসঙ্গে হতে পারে।”
তিনি বলেন, “এখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। নির্বাচিত সরকারই সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করবে, কারণ জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকারের পক্ষেই প্রকৃত সংস্কার সম্ভব।”
ফখরুল আরও বলেন, “জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের মাধ্যমে যে স্প্রেডশীট প্রস্তাবনা এসেছে, তাতে কিছু বিষয়ে নেতিবাচক এবং বিভ্রান্তিকর উপস্থাপন লক্ষ্য করা গেছে। এই প্রস্তাবনার মধ্যে কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু তা বাদ দেওয়া হয়েছে, যার ফলে জনগণের মধ্যে সন্দেহ জন্ম নিতে পারে।”
তিনি বলেন, “সংবিধান এবং নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার প্রস্তাবনা গুলোর পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কিছু ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়োগের প্রচেষ্টা রয়েছে, যা একটি দুর্বল সরকারের জন্ম দিতে পারে।”
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, “দেশের গণতান্ত্রিক চরিত্র এবং জনগণের মালিকানা প্রতিফলিত হয় নির্বাচিত সংসদ এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। এটি নিশ্চিত করার জন্য সংস্কারের প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে।”
তিনি শেষ করেন, “ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্যকে বজায় রেখে, বাংলাদেশে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা বর্তমান সময়ের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। বৃহত্তর জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সকল প্রচেষ্টা পরিচালিত হবে, যা জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”