আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবের মাধ্যমে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছে সম্মিলিত সনাতন পরিষদ।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এ অভিযোগ তোলে। গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি-ঘর, মন্দির ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং ইসকন সম্পর্কে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারের প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জে কে পাল, অধ্যাপক অশোক তরু, প্রধান সমন্বয়ক শ্যামল রায়, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ আচার্য্য, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. মৃত্যুঞ্জয় কুমার রায়, মানিক চন্দ্র সরকার, অ্যাডভোকেট প্রহল্লাদ সাহা ও লায়ন চন্দন কুমার ঘোষ।
বক্তারা জানান, ১৯৪৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সনাতন সম্প্রদায়ের বাড়ি-ঘর, মন্দির ভাঙচুর, সম্পদ লুটপাট, হত্যাকাণ্ড, গুম, ধর্ষণ, ধর্মান্তর, এবং ধর্মীয় অবমাননার নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। কিন্তু এসব ঘটনার সঠিক বিচার কখনও হয়নি।
সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক শ্যামল রায় বলেন, “গত ৫ আগস্টের পর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি, উপাসনালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক হামলা চালানো হলেও আমরা দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারিনি। থানায় অভিযোগ কিংবা আদালতে বিচার চাওয়ার সাহসও পাচ্ছি না।”
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অভিযোগ করেন, সনাতন সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। দেশে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় সনাতনী সম্প্রদায়ের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে আন্দোলন করলেও সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ আচার্য্য বলেন, সনাতনী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করা হলেও শুধু দুর্গাপূজায় একদিন ছুটি ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং নির্যাতনের ঘটনাগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও সেগুলো অস্বীকার বা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামের হাজারী গলির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিরীহ ব্যক্তিদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
বক্তারা জানান, বিশ্বব্যাপী সেবামূলক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে সরকারের সজাগ দৃষ্টি কামনা করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও জানান, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী প্রভুসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা সনাতন সম্প্রদায়ের দাবির আন্দোলনকে দমন করার একটি ষড়যন্ত্র। দ্রুত মামলাগুলো প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।