পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে গড়ে উঠেছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত—একটি পরিবারের ৭৯ জন সদস্য কোরআনে হাফেজ! শাহজাহান হাওলাদার (৯৬) নামের এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি তার পরিবারে কোরআনের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন, যা এখন পুরো এলাকায় বিস্ময়ের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একটি স্বপ্ন থেকে শুরু
শাহজাহান হাওলাদার ছিলেন সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত। তবে ছোটবেলা থেকেই কোরআনের প্রতি ছিল তার অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তিনি দৃঢ় সংকল্প করেছিলেন, তার সন্তানদের কোরআনের হাফেজ বানাবেন। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে তিনি ছয় ছেলে ও চার মেয়েকে কোরআনে হাফেজ বানান। শুধু তাই নয়, সন্তানদের বিয়ে দেন হাফেজ-হাফেজাদের সঙ্গে। তার নাতি-নাতনি, এমনকি নাতজামাইরাও এখন কোরআনে হাফেজ।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাবা-মায়ের ওয়ারিশসূত্রে পাওয়া সম্পত্তি বিক্রি করে শাহজাহান হাওলাদার ছেলেমেয়েদের হাফেজ বানিয়েছেন। তিনি নিজ গ্রামে একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা বর্তমানে কোরআন শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র। তার বড় ছেলে হাফেজ মাওলানা মুজিবুর রহমান সৌদিতে থাকেন। অন্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা, মসজিদে ইমামতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করেন।
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে কোরআনের চর্চা
শাহজাহান হাওলাদারের ছয় ছেলের ৩২ সন্তান এবং চার মেয়ের ২৭ সন্তান কোরআনে হাফেজ হয়েছেন। নাতি-নাতনিরাও হাফেজ হওয়ার পথে। এক বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৭৫, এখন তা বেড়ে ৭৯ জনে দাঁড়িয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, ভবিষ্যত প্রজন্মেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
শাহজাহান হাওলাদার বলেন, “একজন হাফেজ ৭০ জনকে জান্নাতে নেওয়ার সুপারিশ করতে পারবেন। আমি নিজে হাফেজ হতে পারিনি, কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমার সন্তান ও তাদের পরিবার কোরআনের হাফেজ হয়েছে। আমি ধন্য, আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।”
“বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্ত”
স্থানীয় ধর্মীয় সংগঠন ‘হুফফাজুল কোরআন’ বাউফল শাখার সাধারণ সম্পাদক হাফেজ আনিছুর রহমান বলেন, “একটি পরিবারে ৭৯জন হাফেজ—এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বেও বিরল ঘটনা। আমরা এই পরিবারের জন্য দোয়া করি, তারা যেন আরও এগিয়ে যায়।”
শাহজাহান হাওলাদারের পরিবার এখন একটি অনুপ্রেরণার নাম। তাদের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, সত্যিকারের ইচ্ছাশক্তি ও আল্লাহর প্রতি আস্থা থাকলে সবকিছুই সম্ভব!
সুত্রা২৪