বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকার-সরকার (জি-টু-জি) পদ্ধতিতে ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৮১৭ কোটি ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫০ টাকা। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কিছুটা বেশি দামে কেনা হবে এই গম।
বুধবার (২৩ জুলাই) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই গম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬-এর ধারা ৬৮(১) এবং বিধিমালা, ২০০৮-এর বিধি ৭৬(২) অনুসারে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে উপদেষ্টা পরিষদ এটি অনুমোদন দিয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের হুইট অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান এগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এই গম আমদানি করা হবে। প্রতি মেট্রিক টনের মূল্য ধরা হয়েছে ৩০২.৭৫ মার্কিন ডলার।
গম আমদানির যৌক্তিকতা তুলে ধরে খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ৩০ জুন বাণিজ্য সচিব খাদ্য সচিবকে পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বিদ্যমান ১৫.৫ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছে। এতে বাংলাদেশের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা ভারসাম্য করা প্রয়োজন।
সচিবালয়ে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমরা গম আমদানিতে উৎসের বৈচিত্র্য (ডাইভার্সিফিকেশন) আনতে চাচ্ছি। কারণ, অনেক সময় রাশিয়ান বা ইউক্রেনীয় ব্লকে অনিশ্চয়তা দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখন আমাদের আমদানি বাড়ানোর নেগোশিয়েশন চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের গমের মান ভালো।”
যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানিতে খরচ কিছুটা বেশি কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, কিছুটা বেশি, তবে মানের দিক থেকে কিছু সুবিধা রয়েছে। এই গমের প্রোটিনও কিছুটা বেশি। প্রোটিন খুব বেশি তা নয়, তবে একটু বেশি।”
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক প্রয়োগের আর ৮ দিন বাকি আছে, এর মধ্যে আরও আলোচনা হবে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “আগামী ১ আগস্টের আগেই বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখানে যাবেন।”
আরও এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা আশা করছি শুল্ক হয়তো কিছু কমাবে। কারণ, আমাদের ঘাটতি তো খুবই কম—মাত্র ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো।”
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে লবিস্ট নিয়োগের দাবি তোলা হচ্ছে—এমন প্রশ্নে সালেহ উদ্দিন বলেন, “এই ক্ষেত্রে লবিস্ট নিয়োগের প্রসঙ্গ নেই। কারণ, লম্বা সময় নিয়ে কোনো নেগোশিয়েশনের ক্ষেত্রে এই ধরনের লবিস্ট নিয়োগ করা হয়। এখানে যা করতে হবে, কুইক করতে হবে। ওরা তো ঢুকতেই পারবে না ওই অফিসের কাছাকাছি—নেগোশিয়েশন তো দূরের কথা।”
তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের ভালো ইমেজ আছে। সম্প্রতি আমরা যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন, এক্সিলারেট এনার্জি, মেটলাইফের কতগুলো বকেয়া পরিশোধ করে দিয়েছি। বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে ইউএস চেম্বার আমাকে চিঠি লিখেছে।”