29.3 C
Dhaka
Wednesday, July 23, 2025

৩৩ বছরের রুপালি যাত্রায় শূন্য থেকে শিখরে ‘স্বপ্নবাজ’ শাহরুখ

advertisment
- Advertisement -spot_img

তিনি বলিউড বাদশাহ। তাকে একনজর দেখার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে গোটা পৃথিবী। শুধু ভক্ত অনুরাগীই নন, বিশ্ব অঙ্গনের তারকারাও শাহরুখ খান নামক মানুষটার ভালোবাসার জালে বন্দি। কোটি মানুষের স্বপ্ন ও অনুপ্রেরণার সবচেয়ে বড় দূত শাহরুখ খান।

বলিউডের রুপালি পর্দায় দু’হাত মেলে ভালোবাসা ছড়ানো এই মানুষটি দেখতে দেখতে ৩৩ বছর পূর্ণ করলেন চলচ্চিত্র অঙ্গনে। গতকাল, ২৫ জুন বলিউডে ৩৩ বছর পূর্ণ করলেন শাহরুখ খান। ‘আউটসাইডার’ ট্যাগ নিয়ে শুরু করা এই অভিনেতা আজ শুধু বলিউড নয়, গোটা বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী তারকা। দিল্লির সাধারণ এক ছেলে, যার অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মেছিল মঞ্চে কাজ করার সময় থেকেই।

১৯৮৮ সালে টিভি সিরিজ ‘ফৌজি’-তে ক্যাপ্টেন অভিমন্যু রাই চরিত্রে প্রথমবার দর্শকের নজরে আসা সেই শাহরুখ ‘সার্কাস’ এবং ‘উমিদ’-এর মতো টিভি সিরিজে কাজ করলেও বড় পর্দায় আসার স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া। ১৯৯২ সালের ২৫ জুন মুক্তি পায় তাঁর প্রথম সিনেমা ‘দিওয়ানা’। সেই দিনই ছিল বলিউডে শাহরুখ খানের আনুষ্ঠানিক সূচনা। প্রথম ছবিতেই অর্জন করেন ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ নবাগত পুরস্কার।

ক্যারিয়ারের শুরুতে শাহরুখ খান হিরোর চেয়ে ভিলেন চরিত্রে বেশি প্রশংসিত হন। ‘ডর’, ‘বাজিগর’ এবং ‘আনজাম’-এর মতো সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেও মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন। সেখান থেকেই শুরু হয় তার কিংবদন্তি হয়ে ওঠার যাত্রা। ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ তাঁকে এনে দেয় স্থায়ী রাজত্বের আসন। এরপর ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘মোহাব্বতে’, ‘কাল হো না হো’ সহ অসংখ্য ছবিতে রোমান্টিক হিরোর চরিত্রে তিনি হয়ে ওঠেন ভারতীয় সিনেমার চিরসবুজ প্রেমিক।

রোমান্স ছাড়াও শাহরুখ প্রমাণ করেছেন তিনি কতটা বহুমুখী অভিনেতা। ‘স্বদেশ’, ‘চাক দে! ইন্ডিয়া’, ‘মাই নেম ইজ খান’-এর মতো ছবিতে তার অভিনয় দর্শক এবং সমালোচক উভয়ের কাছেই প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়া ‘পহেলি’, ‘জিরো’, ‘ফ্যান’-এর মতো সিনেমায় নিজের চিরচেনা ছক ভেঙে নিজেকে মেলে ধরেছেন ভিন্ন আঙ্গিকে, ভিন্ন রূপে।

অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যবসায়ী হিসেবেও সফল শাহরুখ খান। রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্ট, কলকাতা নাইট রাইডার্স (আইপিএল) এবং ডিজিটাল প্রযোজনায় তার আধিপত্য লক্ষণীয়। তার সমসাময়িক অভিনেতাদের মধ্যে মার্কেটিং পলিসিতে যোজন যোজন এগিয়ে রাখা হয় শাহরুখকে। এমনকি ফোর্বসের তালিকায় একাধিকবার তার নাম উঠে আসে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধনী তারকা হিসেবে।

গত ৩৩ বছরে বলিউড পেরিয়ে শাহরুখ হয়েছেন আন্তর্জাতিক আইকন। বিশ্বের বহু দেশে তার অগণিত ভক্ত এবং তিনি ফোর্বস, টাইমস, ভ্যারাইটি-র মতো প্ল্যাটফর্মে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন একাধিকবার। হলিউডের শীর্ষ নির্মাতা মার্টিন স্করসেজিও শাহরুখকে নিয়ে ছবি তৈরির স্বপ্ন দেখেছিলেন। তবে ছবিটি আর তৈরি হয়নি। ব্রাড পিট থেকে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি— সবাই শাহরুখ খানের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। কিন্তু নিজেকে বলিউডের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন বলিউড বাদশা। হলিউডের দিকে শত সুযোগ সত্ত্বেও পা রাখেননি। ভারতীয় সিনেমার উন্নতি ও সমৃদ্ধিতেই নিজেকে নিবেদিত রেখেছেন।

তবে আকাশছোঁয়া সাফল্যের পর ক্যারিয়ারে ছন্দপতনও হয়েছে অভিনেতার। গত দেড় দশক ধরে বক্স অফিসে শাহরুখের জাদু চলেনি। একের পর এক সিনেমা হয়েছে ব্যর্থ, সমালোচিত। নিজের চিরচেনা ছন্দ হারিয়ে ফেলেন শাহরুখ। এরপরই নিজেকে থামিয়ে নেন। নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া ও জেনারেশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর ২০২৩ সালে পর্দায় ফেরেন ‘পাঠান’ নিয়ে। এরপরই বদলে যাওয়া আরেক গল্পের সাক্ষী হয় গোটা দুনিয়া। বক্স অফিসে অলটাইম ব্লকবাস্টার খেতাব নিয়ে শাহরুখের নতুন যাত্রা শুরু হয়। সেই একই বছর ‘জওয়ান’ ও ‘ডানকি’র মতো হিট সিনেমাও উপহার দিয়েছেন শাহরুখ। এক বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকা আয়ের পাহাড়সমান রেকর্ড গড়ে বীরের মতোই পুনরায় দখলে নিয়েছেন নিজের সিংহাসন।

পরিশেষে বলতেই হয়, গত ৩৩ বছরে শাহরুখ খান হয়ে উঠেছেন সময়ের প্রতীক, স্বপ্ন দেখার সাহস এবং হাজারও মানুষের অনুপ্রেরণা। তার গল্প প্রমাণ করে, শুধু প্রতিভাই নয়— নম্রতা, কঠোর পরিশ্রম আর দৃঢ় মানসিকতা একজন শিল্পীকে কিংবদন্তিতে রূপান্তরিত করে। হ্যাঁ, তিনি জীবন্ত কিংবদন্তি। তিনি কোটি মানুষের হৃদয়ের নায়ক— শাহরুখ খান

সর্বশেষ সংবাদ
- Advertisement -spot_img
আরও নিউজ